বাউফল প্রতিনিধি ॥ পটুযাখালীর বাউফলে স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও যৌতুক মামলা দায়ের করার দায়ে রাহানি জান্নাত টুলু(৪১) নামে এক গৃহবধূকে ঘর থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে তাঁর শ্বশুর-শ্বাশুরীর বিরুদ্ধে। ফলে তিন দিন পর্যন্ত তালাবদ্ধ স্বামীর ঘরের সামনেই দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে অনশন কর্মসূচী পালন করেছেন ওই গৃহবধু। ঘটনাটি ঘটেছে বাউফল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জসিম উদ্দিনের নিজ বাড়ীতেই। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। আজ বুধবার বেলা ১১ টার দিকে সরেজমিনে বাউফল সদর ইউনিয়নের বিলবিলাস গ্রামের মোল্লা বাড়ী গিয়ে দেখা গেছে, স্বামীর ঘর তালাবদ্ধ। তালাবদ্ধ ঘরের সমনে জারিন তাসনিম(৮) ও উমামা তাইবা(৭) নামে দুই সন্তানকে নিয়ে অনশন কর্মসূচী পালন করছেন স্ত্রী রাহানি জান্নাত টুলু। তাঁদের সামনে মটোরসাইকেল থামানো সঙ্গে সঙ্গে কান্না ভেঙ্গে পড়ে কোমলমতি দুই শিশু সন্তান। এ সময়ে তারা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমরা বাবাকে চাই। দীর্ঘ কয়েক মাস পর্যন্ত বাবা আমাদের কোন খোঁজ খবর নেয় না। আমরা ফোন করলে বাবা রিসিভ করেন না । ফোনে মেসেজ লিখে পাঠালে বাবা বলেন এতে তাঁর ডিষ্টাভ হয়। সন্তানদের কান্না দেখে কান্না ধরে রাখতে পারেননি মা রাহানি জান্নাত। সাংবাদিক পরিচয় জানতে পের তিনিও কেঁদে কেঁদে বললেন, আমি আমার স্বামীর বাড়ী ছেড়ে কোথায়ও যাব না। স্বামীকে নিয়ে স্বামীর বাড়ীই থাকতে চাই। আপনাদের মাধ্যমে আমি আমার স্বামীকে পেতে চাই। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১০ বছর আগে বাউফল ইউনিয়নের বিলবিলাস গ্রামের ছত্তার মোল্লার ছেলে সাইফুল ইসলাম (৪০) এর সঙ্গে একই উপজেলার বগা ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের রাজ্জাক মাষ্টারের মেয়ে রাহানি জান্নাত টুলুর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাঁদের সংসারে জারিন তাসনিম(৮) ও উমামা তাইবা(৭) নামে দুই সন্তানের জন্ম হয়। গত ৫ মাস আগে স্ত্রী রাহানি জান্নাতের বাবা রাজ্জাক মাষ্টার মারা যান। এরপর স্বামী সাইফুল ইসলাম স্ত্রীকে ভাইদের কাছ থেকে দুই লক্ষ টাকা যৌতুক হিসেবে আনার জন শারীরিক ও মানসীকভাবে নির্যাতন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে যৌতুকের টাকা না পেয়ে সাইফুল স্ত্রীকে তালাক দেয়ার জন্য উকিল নোটিশ পাঠালে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে সালীশ-মিমাংশার জন্য চেস্টা করা হয়। কিন্তু ওই সালিশ বৈঠকে উপস্থিত হত না সইফুল। ফলে স্বমীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পটুয়াখালী আদালতে নারী নির্যাতন ও যৌতুক মামলা দায়ের করেন স্ত্রী রাহনি জান্নাত। পরে ৩ মাস আগে আদালতে স্ত্রীকে নিয়ে ঘর সংসার করার অঙ্গীকার নামা দিয়ে বড়ী নিয়ে আসেন সাইফুল। এরপরে ঢাকা চলে যান সাইফুল এবং তখন থেকেই স্ত্রী ও সন্তানেদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় তিনি। গত সোমবার সন্তানদেরকে নিয়ে রাহানি জান্নাত ওই যৌতুক মামলায় হাজিরা দিতে পটুয়াখালী গেলে ফিরে এসে দেখেন ঘর তালাবদ্ধ করে রেখে তাঁর উধাও হয়ে গেছেন তাঁর শ্বশুর -শ্বাশুরী । ফোন করলেও স্বামী ও শ্বশুর -শ্বাশুরী কেউ ফোন রিসিভ করছেন না। স্ত্রী রাহনি জান্নাত বলেন, ঘরে প্রবেশ না করা পর্যন্ত ওই অনশন কমৃসূচী পালন করে যাব। তিন পর্যন্ত আমি ও আমার দুই সন্তান অনাহারে থাকায় আমার দুই মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমরা মরে গেলেও স্বামীর ঘর ছেড়ে অন্য কোথাও যাব না। এ ব্যাপারে বাউফল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
Leave a Reply